HomeBengalগ্রেফতার হয়েই মুখ খুললেন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা, অন্যদিকে বিচারপতির মন্ত্যব ঘিরে জল্পনা

গ্রেফতার হয়েই মুখ খুললেন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা, অন্যদিকে বিচারপতির মন্ত্যব ঘিরে জল্পনা

- Advertisement -

মহানগর ডেস্কঃ বছরের শুরুতে অর্থাৎ ৫জানুয়ারি  ইডি আধিকারিক সহ সাংবাদিক দের ওপর হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন  শেখ শাহাজাহান। ৫৬ দিন পর তাঁকে রাজ্যপুলিশ গ্রেফতার করেছে। এই গ্রেফতারি নিয়ে বঙ্গ জুড়ে উত্তেজনার পারদ হু হু করে চড়ছে। গ্রেফতার হওয়ার পর বাড়ছে আরও উত্তাপ।   শেখ শাহাজাহান ধরা পড়ার পর তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে আদালতে করা মন্তব্য নিয়ে আরও নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সব দোষ স্বীকার  করেছেন তিনি।  তাঁর মন্তব্য ঘিরেই এখন রাজনৈতিক মহলের অন্দরে চর্চা তুঙ্গে। সেই সঙ্গেই বিচারপতির মন্তব্য আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।   আদালত জানিয়েছে দিনের পুলিস হেফাজতে থাকবে সন্দেশখালির  বাঘ  শাহজাহান।

৫৬ দিনের মাথায় মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয় সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাকে। পুলিশের নথিতে, রাত ১.১৫ মিনিট নাগাদ শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা দেখানো হয়েছে। গ্রেফতার করার পরে বসিরহাট আদালতে এনে পেশ করা হয় পলাতক শেখ শাহাজাহানকে। পুলিশের তরফ থেকে ১৪দিনের হেফাজত চাওয়া হয় শাহজাহান কে রাখার জন্য, কিন্তু বিচারক তার পরিবর্তে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। আদালতে সব অপরাধ  স্বীকার  করে নিয়েছেন বাদশা। কোর্টরুম থেকে লক আপে ঢোকার সময়  তাঁকে অনুতপ্ত  নয়  বরং খোশ মেজাজে  বুক ফুলিয়ে কার্যত রাজকীয়  হাবভাব তার চোখে মুখে তার ব্যবহারে স্পষ্ট প্রস্ফুটিত হচ্ছিল ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মিনাখাঁ থানায় সকাল পর্যন্ত শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলছে। পুলিশের দাবি, শেখ শাহজাহান জেরায় তাঁর নিজের সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। সেই ৫ই জানুয়ারির পর এই তাঁর দেখা পাওয়া গেল।তবে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি, সব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান শেখ শাহজাহান।

বসিরহাট আদালতে পেশ করার পর সওয়াল জবাব শুরু হওয়ার ১০মিনিটের মধ্যেই তাঁর জবাবে কোর্টরুমে বিস্ফোরক ঘটালেন শেখ শাহজাহান। শাহাজাহান বলেন, “ইডি-র হাতে গ্রেফতারির আশঙ্কায় হামলার নির্দেশ দিয়েছিলাম।” পুলিশের নথিতে এই বিষয়ে শাহজাহানের স্বীকারোক্তি আদালতে জমা দেওয়ার হয়েছে। এর থেকে এটাই স্পষ্ট সন্দেশখালিতে এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত ছিল।
সূত্রের খবর,পুলিশ, আদালতে যেই নথি জমা দিয়েছে, তাতে উল্লেখ করা রয়েছে ১৬১ জন পুলিশের কাছে জবানবন্দি করেচেন যে ৫ জানুয়ারি, রেশন দুর্নীতি মামলায় যখন ইডি আধিকারিকরা শাহজাহানের বাড়ি তল্লাশি করতে গিয়েছিলেন,তাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। শাহাজাহান বলেন, ইডি আধিকারিকরা সিআরপিএফ জওয়ান সহ এসেছিলেন, তা দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, ইডি তাঁকে গ্রেফতার করতে এসেছেন, সেই কারণে তিনি অনুগামীদের ফোন করে নির্দেশ দেন তাদের আটকাতে, যাতে কোনওভাবেই কোনো ইডি আধিকারিক বাড়িতে ঢুকতে না পারেন। তাঁদের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনিই, এই কথাও শিকার করেন। এমনকি তাঁদের জিনিসপত্রও লুঠের নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দুদিন আগেই কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন যে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে ইডি, সিবিআই ও রাজ্য পুলিস। এদিকে শেখ শাহাজাহান ৮ দিনের মধ্যে গ্রেফতার হবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার, গত সোমবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন ৭ দিনের মধ্যেই শাহাজাহানকে গ্রেফতার করবে পুলিশ। পাশাপাশি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও শাহজাহানকে ধরার জন্য ৭২ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। এই মন্তব্যের ২ দিন পরই গ্রেফতার সন্দেশখালির বাদশা । গতকালই স্থগিতাদেশ আর তারপরই এইদিন ভোর রাতে গ্রেফতার।

বসিরহাট আদালত ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শেখ শাহজাহান। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম স্পষ্ট বলেন, আমার কোনও সমবেদনা নেই। শাহজাহানের আইনজীবী বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। শাহজাহানের গ্রেফতারির খবর আইনজীবি প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানান । কিন্তু তারপরই প্রধান বিচারপতি আর্জি গহন না করে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ” এই মুহূর্তে দাড়িয়ে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৪৩ টি মামলা রয়েছে। এত অপরাধ যে করেছে এত বছর ধরে তাঁর প্রতি কোনও সমবেদনা আমার নেই” বলে জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। এই মন্তব্য করার পর কিছুটা মজার সহিত নিন্দা র ছলে প্রধান বিচারপতি শাহজাহানের আইনজীবীকে মন্তব্য করেন যে, “এই মক্কেলকে নিয়ে আপনাকে আগামী ১০ বছর ব্যস্ত থাকতে হবে। আপনাকে ৪-৫ জন জুনিয়রও রাখতে হবে। কারণ যা মামলার সংখ্যা।” শেখ শাহজাহানের আগাম জামিনের আবেদন দুদিন আগেই খারিজ করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন শেখ শাহজাহানের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির আরও তাৎপর্য পূর্ণ।

Most Popular